সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তনের ঘোষণা এসেছিল। পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল ঘোষণা করেছিলেন, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিক স্তরে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করা হবে। তবে এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সভাঘরে প্রশাসনিক বৈঠকে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, প্রাথমিকে কোনও সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হবে না।
মুখ্যমন্ত্রীর কঠোর বার্তা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ছোট ছোট শিশুদের উপর পড়ার চাপ কমানোর পরিবর্তে সেমিস্টার চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অযৌক্তিক। তারা এখন টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিটল স্টার শেখার সময়ে আছে। তাদের উপর সেমিস্টার পদ্ধতির চাপ দেওয়া উচিত নয়।”
তিনি আরও জানান, কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তা সরকারের শীর্ষ স্তরের অনুমোদন নিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীকে বা মুখ্যসচিবকে না জানিয়ে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
সিমেস্টার পদ্ধতির প্রস্তাব এবং বিতর্ক
পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল গত সপ্তাহে সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছিলেন, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য ‘ক্রেডিট বেসড সেমিস্টার সিস্টেম’ চালু করা হবে। এর পাশাপাশি, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে পাঠ্যক্রমেও পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা ছিল। এই পদ্ধতির মাধ্যমে ‘হোলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড’ প্রবর্তনের পরিকল্পনাও করা হয়েছিল। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ভর্ৎসনার পরে গৌতম পাল জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
20 more cheetahs brought from south africa 2025: দক্ষিণ আফ্রিকার চিতা এবার পাড়ি দিচ্ছে গান্ধীসাগরে
কেন বাতিল হলো সিমেস্টার পদ্ধতি?
মুখ্যমন্ত্রী সেমিস্টার পদ্ধতি বাতিলের কারণ হিসেবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি তুলে ধরেন:
- পড়ুয়াদের চাপ বৃদ্ধি: প্রাথমিকে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হলে শিশুদের উপর বাড়তি চাপ পড়বে। এটি তাদের মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
- হোলিস্টিক রিপোর্ট কার্ডের ক্ষতি: এই পদ্ধতি চালু হলে ‘হোলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড’ প্রবর্তনে আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।
- অভ্যস্ততার অভাব: প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়ারা সেমিস্টার পদ্ধতিতে অভ্যস্ত নয়, যেখানে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এটি মোকাবিলা করতে সক্ষম।
পরবর্তী পদক্ষেপ
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন যে, কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তা শীর্ষ স্তরের অনুমোদন আবশ্যক। তিনি বার্তা দিয়েছেন যে, সরকার পরিচালিত কোনও দফতরই নবান্নকে এড়িয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।
শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, স্টুডেন্ট উইক (৮ থেকে ১০ জানুয়ারি) চলাকালীন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আপাতত প্রাথমিকে সেমিস্টার পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে।
উপসংহার
শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য নতুন উদ্যোগ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সেই উদ্যোগ পড়ুয়াদের জন্য উপযোগী হওয়া আবশ্যক। মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত ছোট পড়ুয়াদের উপর থেকে চাপ কমাবে এবং শিক্ষার মানোন্নয়নের দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে। শিক্ষা সংক্রান্ত নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরও সতর্ক এবং সুসংবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।